তুঘলক বংশের ইতিহাস ও ভারত শাসন - ইসলামী ইতিহাস | History and reign of the Tughlaq dynasty
গাজী মালিক ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই খিলজী বংশের পতন হয়। গাজী মালিক সিংহাসনে আরােহণ করে ‘গিয়াস উদ্দীন তুঘলক' উপাধি গ্রহণ করেন। সুলতান গিয়াস উদ্দীন তুঘলক ৫ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করেন। এ ৫ বছরে তিনি অনেক এলাকা দিল্লীর শাসনভুক্ত করেন। সে বিজয়ের সূত্র ধরেই বঙ্গদেশ জয় করলে তার সন্তান জুনা খান ওরফে উলুঘ খান পিতার সংবর্ধনার জন্য এক বিরাট কাষ্ট গৃহ নির্মাণ করেন। ১৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসুদ্দীন তুঘলক দেশে ফিরলে উক্ত গৃহের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেন।
পিতার মৃত্যুর পর উলুঘ খান মুহাম্মদ বিন তুঘলক নাম ধারণ করে সিংহাসনে আরােহণ করেন এবং দীর্ঘ ২৬ বছর পর্যন্ত শাসন কার্য পরিচালনা করেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ও অসাধারণ প্রতিভাবান সুলতান। তার শাসনামলের শেষটায় কিছুটা বিদ্রোহ দেখা যায়। ১৩৫১ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাটে বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি সেখানকার বিদ্রোহ দমনের জন্য তথায় পৌঁছান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক মৃত্যুকালে কোন উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করে যাননি এবং তার কোন পুত্র সন্তানও ছিল না। তাই তার মৃত্যুর পর বিশেষজ্ঞ মহলের অনুরােধে তার চাচাতো ভাই ফিরুজ শাহ তুঘলক।
সিংহাসনে আরােহণ করেন। ফিরুজ শাহ তুঘলক ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ সুলতান। তিনি তার শাসনামলে বিচার বিভাগকে ইসলামী শরীয়তের ছাঁচে গড়ে তুলে ছিলেন। তিনি প্রায় ৩৭ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করে ১৩৮৮ খ্রীষ্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর পর তার পৌত্র তুঘলক শাহ দ্বিতীয় গিয়াস উদ্দীন উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরােহণ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত তিনিও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমীর উমারাদের ষড়যন্ত্রের ফলে সিংহাসনচ্যুত হন।
এ সুযােগে সুলতান ফিরুজ শাহ তুঘলকের কনিষ্ঠ পুত্র যুবরাজ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন। মুহাম্মদ নাম ধারণ করে ১৩৯০ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরােহণ করেন। নাসিরুদ্দীন মুহাম্মদ মাত্র চার বছর শাসন কার্য পরিচালনা করে ১৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হুমায়ুন সিংহাসনে আরােহণ করেন। কিন্তু তিনি কয়েক মাসের মাঝেই মৃত্যু বরণ করলে মুহাম্মদের সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র ‘মাহমুদ নাসিরুদ্দীন মাহমুদ তুঘলক' নাম ধারণ করে সিংহাসনে আরােহণ করেন। সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদের শাসনামলে রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের গােলযােগ সৃষ্টি। হয় এবং দুর প্রদেশের শাসনকর্তাগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ফিরুজ শাহের বংশধরদের গৃহযুদ্ধের সুযােগে তুর্কি চাঘতাই বংশের তুরঘাই এর পুত্র তৈমুর লং ১৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এক বিরাট বাহিনী নিয়ে ভারত আক্রমণ করে দিল্লী দখল করে নেয়। মাহমুদ দিল্লি হতে বিতাড়িত হন। কিন্তু তৈমুর লং ভারত বিজয় করে মাত্র ২৫ দিন দিল্লিতে অবস্থান করার পর অসংখ্য দাসদাসী ও লুণ্ঠিত সম্পদ নিয়ে দিল্লি ত্যাগ করেন।
প্রত্যাবর্তনের পথে। তিনি খিজির খান কে মুলতান, লাহাের ও আশপাশের এলাকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে যান। কিন্তু তৈমুর লং ভারত ত্যাগ করলে নাসীর উদ্দীন পুনরায় দিল্লিতে ফিরে আসেন এবং হৃত সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন। অতঃপর তিনি। ১৪১১ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করলে আমীর উমারাগণ তার মন্ত্রী দৌলত খান লােদীকে সিংহাসনে বসান। মাত্র দু'বছর পর ১৪১৪ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুর লং এর প্রতিনিধি ও মুলতানের শাসনকর্তা খিজির খান তাকে পরাজিত করে দিল্লীর মসনদ দখল করে স্ববংশীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন