ভোটার নিবন্ধন নিয়ে আমার কিছু কথা | বাংলা টাইপোগ্রাফি ডিজাইন
আমার জন্ম ২০০১ সনে। কিন্তু, বাংলাদেশের প্রচলিত সামাজিক প্রথা অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধনে আমার বয়স ২ বছর কমানো হয়। অর্থাৎ, ২০০৩ এ দেওয়া হয়। ১৯ ’র নির্বাচনের পর যখন এলাকায় গিয়ে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করা হয়। তখন ভোটার হতে পারি নাই। এদিকে ভোটার কার্ড না থাকার দরুন বেশ কিছু সমস্যায় ভুগতে হচ্ছিল। যেমন, নিজস্ব কোনো সিম কার্ড নেই। ফলে, কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করতে গেলে পরিবারের অন্য সদস্যের ফোনে কল করতে হত। তাছাড়া, যেহেতু সিম নেই। সুতরাং, অনলাইনে কেনা-কাটার বিল বিকাশ প্রদান করতে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হত। তাই, সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার না হয় ভোটার নিবন্ধন করেই ফেলি। বার্ষিক পরীক্ষার শেষের দিন মনস্থ করলাম যে, আজকে ভোটার নিবন্ধন করবো। যারা গ্রামে থাকেন। তাদের জন্য ভোটার নিবন্ধন করতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ, চারিত্রিক সনদ সহ নিবন্ধন ফরমে সত্যায়নের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানের ধারে ধারে ঘুরতে হয়। ইউপি চেয়ারম্যানকে সব সময় পাওয়াও যায় না। তবে, সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকি। তাই, অফিস কালীন সময়ে নগর ভবনে সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিল উপস্থিত থাকে। যাই হোক, সেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নাই।
বাংলা টাইপোগ্রাফি ডিজাইন |
ডিজাইন: ভোটার নিবন্ধন
ধরন: বাংলা টাইপোগ্রাফি
ডিজাইনার: মুস্তফা সাঈদ মুস্তাক্বীম
দিনটি ছিল বৃহস্পতি বার। সকাল ৮টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়। যেহেতু, রিয়াদুস সালিহীন এবং আক্বিদাতুত ত্বহাবী পরীক্ষা। তাই, প্রশ্ন কমন পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগের রাতে প্রায় ৪টা পর্যন্ত পড়েছি। যাই হোক, পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি, সবই কমন পড়েছে। তাছাড়া, পরীক্ষার খাতা দেখবেন। তিনি লেখার উপর ভিত্তি করে নাম্বার দিয়ে দেন। মোটামুটি লিখলে ৯০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত দেন। যাই হোক, ৩ ঘন্টার পরীক্ষা দেড় ঘন্টায় শেষ করে বাসায় আসলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর অনলাইনে আবেদন করার জন্য বের হলাম। আবেদন ফরম পূরণের পর হাতে প্রিন্ট কপি নিয়ে সোজা নগর ভবনে চলে এলাম। সিটি করপোরেশন কে নগর ভবন বলা হয়। যাই হোক, সেখান থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নিয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসের দিকে যাত্রা করলাম। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টার মত লাইনে দাঁড়িয়ে কাগজ জমা দিতে গেলাম।
শুধু ফরম আর ৫ম শ্রেণির সার্টিফিকেট দেখে হাতে কাগজ ধরিয়ে দিল। যা যা আনতে হবে, সেটা কাগজে লেখা ছিল। এতক্ষণে বেলা ৩ টা বেজে গেছে। হাতে মাত্র এক ঘণ্টা সময় বাকি আছে। এরপর ফরম জমা নেওয়া হবে না। আমি বাসায় এসে অভিভাবকের স্বাক্ষর, NID নাম্বার, পিতা-মাতা উভয়ের NID ফটোকপি নিয়ে পুনরায় গেলাম অফিসে। পুনরায় সিরিয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হল। যখন কাগজপত্র জমা দিবো, তখন আমাকে বলল: আরও কাগজ পত্র আনতে হবে। যেমন: বাসার বিদ্যুৎ বিলের কপি, চারিত্রিক সনদ। তখন আমার হাতে তেমন সময় ছিল না। দ্রুত বাসায় ফোন দিলাম বিদ্যুত বিলের কাগজ বাহির করে রাখতে। আমি বাসায় এসে কেবল বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে নিয়ে পুরনায় গেলাম নগর ভবনে চারিত্রিক সনদের জন্য। গিয়ে দেখি, কাউন্সিলর সাহেব কোনো এক কাজে বাহিরে গেছেন। কি এক বিপত্তি। অফিসে কর্মরত একজনকে বললাম: আমার চারিত্রিক সনদ লাগবে। তিনি ভেতর থেকে চারিত্রিক সনদের প্যাড থেকে একটি পৃষ্ঠা ছিড়ে এনে দিলেন। যেখানে কাউন্সিলরের স্বাক্ষর করা ছিল। যাই হোক, নিজ হাতে নিজের চারিত্রিক সনদ যাবতীয় তথ্য পূরণ করলাম। এবার সকল কাগজ নিয়ে দ্রুত হাজির হলাম নির্বাচন কমিশনে। যেতে যেতে বিকেল ৪ টা বেজে গেছে। তারা সকল কাগজপত্র চেক করে বলল: সিমে মেসেজ যাবে। সেখানে তারিখ বলা হবে সেই দিন ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হবে।
যাই হোক, এতক্ষন যাবৎ সংক্ষিপ্ত আকারে ঘটনা বর্ণনা করলাম। এখন কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবো। আমাকে বার বার ফেরৎ পাঠানো হয়েছিল সকল কাগজ পত্র একত্রে আনার জন্য। আপনি আপনার সকল কাগজ সাথে নিয়েই তাদের অফিসে যোগাযোগ করবেন। ভোটার নিবন্ধনের জন্য আপনাকে সঙ্গে করে চারিত্রিক সনদ, জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি, শিক্ষা সনদের ফটোকপি, কারেন্ট বিলের ফটোকপি, পিতা-মাতার NID কার্ডের কপি সঙ্গে নিয়ে আসবেন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের সহায়তা নিন। আপনি কাগজ পত্র জমা দিলে তারা আপনাকে কোনো রসিদ প্রদান করবে না। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেয়। ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার সময় আপনাকে তারা রসিদ প্রদান করবে। কাগজ পত্র জমা দেওয়ার ২ থেকে ৩ সপ্তাহের ভেতরে ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার আগের দিন আপনার মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হবে। তাই, দৈনিক অন্তত দুই বেলা সিমের মেসেজ পাঠানো হয়েছে কিনা, সেটা যাচাই করুন। নির্বাচন অফিসে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে চেয়ার নিয়ে যেতে পারেন। না হয় আপনার দাড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমরে ব্যাথা শুরু হতে পারে। আমার মত আপনি যদি নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক সার্ভার স্টেশনে ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রদান করে থাকেন। তাহলে, সাথে সাথে অনলাইন কপি বের করে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি অফিসের সামনে বিভিন্ন দরবেশ বাবা বসে থাকেন। তারা, মোটা অঙ্কের হাদিয়ার বিনিময়ে ১০ দিনের কাজ ২ দিনেই করে দেওয়ার অফার দেন। সাধারণত, পাসপোর্ট অফিসের সামনে তাদের উৎপাত একটু বেশী। আমি কোনো বাবার খপ্পরে পড়ি নাই। যাই হোক, আমাকে এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। আরেকটা বিষয়, চারিত্রিক সনদ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাকে সনদ আনার জন্য পুনরায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, আগে থেকেই স্বাক্ষরকৃত চারিত্রিক সনদ নিজের হাতে পূরণ করে সেটা জমা দেওয়ার মাঝে তেমন কোনো ফায়দা দেখি না। যদি প্রতিটি ব্যক্তিকে যাচাই-বাছাই করে চারিত্রিক সনদ প্রদান করা হত। তাহলে, এই সনদের একটা মূল্যায়ন করা হত। একজন মজা করে বলেছিল: চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চারিত্রিক সনদ নিতে গিয়ে দেখি, চেয়ারম্যান নিজেই ধর্ষণ মামলার আসামী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন