গজনী বংশের ভারত শাসন: সুলতান মাহমুদ গজনবী ও সবুক্তগীনের শাসনকাল - ইসলামী ইতিহাস
প্রাথমিক পর্যায়ে আব্বাসীয় খলীফাগণ দাপটশালী থাকলেও পরবর্তীতে তারা খানিকটা আরামপ্রিয় হয়ে উঠেন। ফলে তাদের তুর্কী দেহরক্ষীগণ ক্রমেই তাদের উপর প্রবল হয়ে উঠে এবং খলীফাগণ তাদের নিকট খেলার বস্তুতে পরিণত হয়। শাসনকার্যে তাদের দুর্বলতার সুযােগ বুঝে দূর প্রদেশের শাসকবর্গ আপন আপন প্রদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ফলে খিলাফতের শক্তি ক্রমেই পঙ্গু হয়ে যায়। সে সময় খােরাসান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সাসানিদগণ স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। সাসানিদ বংশের পঞ্চম রাজা আব্দুল মালিকের ‘আলপতগীন' নামক একজন কৃতদাস ছিল। আলপতগীন তার প্রভূর আনুগত্যের মাধ্যমে খােরাসানের শাসনকর্তার পদে উন্নীত হন। তার প্রভূর মৃত্যুর পর সে গজনীতে উপস্থিত হয় এবং সেখানকার শাসনকর্তা আবু বকর লাইককে পরাজিত করে ৯৬২ খ্রীঃ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের গােড়পত্তন করেন। সে সময় থেকেই গজনী বংশের শাসনকালের সূচনা হয়।
আলপতগীন ১৪ বছর রাজত্ব করার পর তদীয় সন্তান আবু ইসহাকের হাতে শাসন ভার অর্পণ করে ইন্তেকাল করেন। আবু ইসহাক অল্প কিছু দিন শাসন কার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে পীরাই সিংহাসনে সমাসীন হন। কিন্তু পীরাইয়ের শাসন কার্য জনগণের নিকট মনপুত না হওয়ায় তারা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ৯৭৭ খ্রীষ্টাব্দে আলপতগীনের কৃতদাস সবুক্তগীনকে ক্ষমতায় বসায়। সবুক্তগীন যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন ভারতবর্ষের উত্তর পশ্চিম এলাকায় হিন্দু রাজা জয়পাল রাজত্ব করত। সবুক্তগীন শক্তিশালী এক বাহিনী নিয়ে রাজা। জয়পালের এলাকা অধিকার করার মানসে ৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ঘুজাত নামক স্থানে জয় পালের বাহিনীর মুখােমুখী হন। এতে রাজা জয়পাল পরাজিত হয়। পরে সে মুসলমানদের অগ্রগতি রােধ করার উদ্দেশ্যে আশপাশের হিন্দু রাজাদের সহযােগিতা নিয়ে এক সম্মিলিত বাহিনী গঠন করেন। ৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে এ সম্মিলিত বাহিনী। সবুক্তগীনের নিকট পরাজিত হলে লামঘান ও পেশােয়ারের মধ্যবর্তী স্থানের ক্ষুদ্র রাজ্যগুলােও গজনী সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। বলতে গেলে গজনী বংশের এটাই সর্বপ্রথম ভারত অধিকার।
পরবর্তীতে সবুক্তগীনের কনিষ্ঠতম পুত্র সুলতান মাহমুদ গজনবী ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নিয়ে ১০২৭ খ্রিষ্টাব্দের মাঝে ভারতবর্ষে সর্বমােট ১৭ বার অভিযান পরিচালনা করেন। সুলতান মাহমুদের বারংবার ভারত অভিযানে অনেকগুলাে খন্ড রাজ্য গজনী সাম্রাজ্যের করতল গত হলেও একমাত্র পাঞ্জাব ব্যতীত অন্য সব এলাকাই পুনরায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল এবং সেসব এলাকায় হিন্দু শাসকরা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠে ছিল। মাহমুদের পর দীর্ঘ একশত পঞ্চাশ বছর ধরে তার উত্তরাধীকারীগণ গজনীতে রাজত্ব করলেও তাদের মাঝে কেউই উল্লেখযোগ্য ছিল না। তারা ক্ষমতা নিয়ে নিজেদের মাঝে কলহে লিপ্ত হয়। ফলে তাদের ক্ষমতা ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে। গজনী বংশের অন্তর্দ্বন্দের সুযোগ নিয়ে ঘুর বংশের সুলতান ঘুরী গজনী বংশের শেষ সুলতান খসরু মালিককে পরাজিত করে ১১৭৩ খ্রি: গজনীর ক্ষমতা দখল করে নেন। এতে করে গজনী বংশের পতন ঘটে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন