মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কর্মতৎপরতা (১৮১৯ - ১৮৬২ খ্রি:) - Tips Tune

 ১৮১৯ খ্রীঃ মাদারীপুর মহকুমার মুলতগঞ্জ থানায় তাঁর জন্ম হয়। পিতা হাজী শরীয়তুল্লার গৃহেই তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয়। উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ১২ বৎসর বয়সে দুদু মিয়াকে মক্কা শরীফ প্রেরণ করা হয়। মক্কা যাওয়ার সময় বেশ কিছুদিন তিনি কলকাতায় অবস্থান করেন। এ সময় সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রাহ. এর অন্যতম শিষ্য হাজী নেছার উদ্দীন ওরফে তিতুমীরের সাথে তার পরিচয় হয়। তাঁর সাহচর্যে দুদু মিয়া সাইয়্যিদ আহমদ রাহ, এর আদর্শিক চেতনা দ্বারা প্রভাবিত হন। মূলতঃ সে চেতনার ভিত্তিতেই তিনি তার পরবর্তী জীবনের সংগ্রামী অবকাঠামাে তৈরি করে ছিলেন। এ কারণে দাওয়াত, তালকীন ও ইরশাদের পাশাপাশি ইরংরেজ বিরোধী তৎপরতা তাঁর জীবনের অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়ায়। মক্কায় ৫ বৎসর অবস্থান করে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করার পর তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেও তিনি তাঁর পিতার নিকট উচ্চতর জ্ঞানচর্চা করেন।

মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কর্মতৎপরতা (১৮১৯ - ১৮৬২ খ্রি:) ছিলেন ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা এবং ভারতবর্ষে ইংরেজের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী
মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কর্মতৎপরতা

 কর্মজীবন: ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে হাজী শরীয়তুল্লাহর মৃত্যুর পর ফরায়েজীগণ তাঁকে নিজেদের নেতা নিযুক্ত করেন। তার নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকেই ফারায়েজী আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার হয়। ইংরেজদের মদদপুষ্ট হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার থেকে মুসলমান কৃষকদের রক্ষা করার জন্য তিনি এক বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। মুসলমান প্রজাদের উপর আরােপিত বিভিন্ন বেআইনি পৌত্তলিক কর প্রদানের ব্যাপারে তিনি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন এবং এ ভিত্তিতে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস গ্রহণ করেন। ১৮৪১ ও ১৮৪২ খ্রীঃ তিনি কানাইপুর ও ফরিদপুরের জমিদারদের বিরুদ্ধে দুটি যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করেন।

কানাইপুরের জমিদার তার বিশাল লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে ভীত হয়ে আক্রমণের পূর্বেই এই মর্মে সন্ধিবদ্ধ হয় যে, ফরায়েজীদের উপর সে কোনরূপ অত্যাচার করবেনা এবং তাদের থেকে কোনরূপ বেআইনী কর আদায় করবে না। ফরিদপুরের জমিদারের বিরুদ্ধে অভিযানকালে ফরায়েজীরা জমিদার বাড়ী আক্রমণ করতঃ জমিদার মদন ঘােষকে হত্যা করে ফেলে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ইংরেজ সরকার ১১৭ জন ফরায়েজীকে গ্রেফতার করে। তন্মধ্যে ২২ জনকে ৭ বৎসর করে সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। অবশ্য দুদুমিয়ার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোন অভিযােগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

 দুদু মিয়ার প্রথম দিককার এসব বিজয় রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কারণ তাঁর এই বিজয় অত্যাচারে জর্জরিত  কিংকর্তব্যবিমূঢ় কৃষক শ্রেণী ও সাধারণ মানুষের কাছে তাকে জনপ্রিয় করে তােলে। মানুষ তাঁকে ত্রাণকর্তা রূপে ভাবতে শুরু করে এবং দলে দলে তার আন্দোলনে এসে যােগ দিতে থাকে। যে সব মুসলমান এতদিন দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। তারাও ক্রমান্বয়ে এ আন্দোলনে এসে শরিক হতে শুরু করে। অত্যাচারী জমিদাররা তাকে আতঙ্ক মনে করে ইংরেজ সরকার ও নীলকর সাহেবদেরকে তাঁর বিরুদ্ধে খেপিয়ে দেয়। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চাপানাে হয়। কিন্তু তিনি সব ষড়যন্ত্র কাটিয়ে উঠেন এবং দীর্ঘ ১০ বৎসর দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কারের কাজ চালিয়ে যান। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ চলাকালে ইংরেজ সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ দুই বত্সর কলকাতার জেলে আটক করে রাখে। অতঃপর জেল থেকে মুক্তি লাভ করে দেশে ফিরলে তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮৬০ সালে মুক্তি লাভের পর তিনি ঢাকার বংশালে বসবাস করতে শুরু করেন। 

মৃত্যু: ১৮৬২ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর এখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর তিন পুত্র গিয়াস উদ্দীন হায়দার, আব্দুল গাফুর ওরফে নয়া মিয়া ও সাঈদ উদ্দীন আহমদ পর্যায়ক্রমে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৮৬০ সালে সাঈদ নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৬৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর মুহসিন উদ্দীন দুদুমিয়া এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ৮ই আগস্ট ১৯৯৭ সালে তিনিও মৃত্যু বরণ করেন।