ভারতে বৃটেনিয়ান ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিষ্ঠা ও ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা - পর্ব: ২

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে বহিঃশক্তির অনুপ্রবেশ অব্যাহত ছিল। এ দেশের ধন-সম্পদের প্রাচুর্যের কথা বিশ্বময় ছড়িয়ে ছিল। ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে বণিকেরা এ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আগমন করত। পুরো আলোচনা ৩টি পর্বে ভাগ করেছি। প্রথম পর্বে আরব বণিকদের আগমন,তুর্কীদের বণিকদের আগমন, ওলন্দাজের বণিকদের আগমন, পর্তুগীজদের বণিকদের আগমন, ও ফরাসী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। দ্বিতীয় পর্বে বৃটেনিয়ান ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিষ্ঠা, বৃটেনিয়ান ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করছি। আশা করি, ভারতবর্ষে ইংরেজদের আগমন, ক্ষমতা বিস্তার সম্পর্কে পাঠকগণ বিস্তারিত জানতে পারবেন। 

ভারতে বৃটেনিয়ান ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিষ্ঠা ও ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। Establishment of East India Company and English domination in India
ভারতে বৃটেনিয়ান ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিষ্ঠা ও ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা



 বৃটেনিয়ান ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রতিষ্ঠা:

 পর্তুগীজদের সাফল্যজনক নৌ অভিযান ও সমুদ্র বাণিজ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইংরেজ বণিকগণ বাণিজ্য করার মানসে প্রাচ্যে আগমনের যথােপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে থাকে। ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সিস ড্রেকের সমুদ্র পথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ এবং ইংরেজ নৌ বহর কর্তৃক স্পেনীশ আর্মডার পরাজয় ইংরেজদের সমুদ্র অভিযানে উৎসাহিত করে। উপরন্তু, র্যালফফীচ এবং জন মিনডেনহল (১৫৮৫-১৫৯৯) প্রমুখ ইংরেজ পর্যটকদের বর্ণনায় ভারতবর্ষের অতুলনীয় বৈভব ও ঐশ্বর্যের কথা ইংরেজগণ জানতে পারে। ১৫৯১ হতে ১৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মাঝে জেমস ল্যাংকাষ্টার উত্তমাসা অন্তরীপ ও পেনাঙ্গে আগমণ করেন; ১৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বেনজামিন উড প্রাচ্যদেশে সমুদ্রাভিযান করেন। ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জন মিনডেনহল স্থলপথে লন্ডন হতে ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং সাত বৎসর ভারতবর্ষে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি ভারতের বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা স্বদেশী পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরেন। ফলে প্রাচ্যদেশে বাণিজ্য করার জন্য লন্ডনে ২১৮ জন সদস্য নিয়ে একটি বণিক সম্প্রদায় গঠিত হয় এবং রাণী প্রথম এলিজাবেথের নিকট হতে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তারা একটি সনদ লাভ করেন। পনের বৎসর মেয়াদ সম্পন্ন এই সনদে প্রাচ্য দেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এই বণিক সম্প্রদায়কে একচেটিয়া অধিকার প্রদান করা হয়। এই বণিক সম্প্রদায়ই ইতিহাসে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী নামে পরিচিত।

 ইংরেজ বণিকগণ এ দেশে আসার পর প্রধানতঃ দুই ধরনের তৎপরতা চালায়। যথা- 

  •  ব্যবসায়িক তৎপরতা।
  •  রাজনৈতিক তৎপরতা।

 ব্যবসায়িক তৎপরতার বিস্তারিত বিবরণ: 

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তাদের তৎপরতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। (ক) বিভিন্ন স্থানে কুঠি স্থাপন ও এ দেশীয় সরকারের অনুমোদন লাভ। (খ) অপরাপর বণিকদের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিযােগিতা।

 ক. বিভিন্ন স্থানে কুঠি স্থাপন:

 এ দেশীয় সরকারের অনুমােদন লাভ ৪ সুরাটে কুটি স্থাপন ৪ কোম্পানী প্রথম কয়েক বৎসর পৃথক পৃথকভাবে মসলা ব্যবসার জন্য কয়েকটি বাণিজ্য জাহাজ সুমাত্রা, মালাক্কা ও জবদ্বীপে প্রেরণ করে।  ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সুযােগ সৃষ্টির জন্য ১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে ক্যাপটেন হাকিন্স ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের আদেশে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে আগমণ করেন। ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীর হকিন্সের আবেদন ক্রমে সুরাটে ইংরেজদের একটি কুঠি স্থাপনের অনুমতি দেন। কিন্তু সুরাটের বণিকদের বিরােধিতা ও পূর্তুগীজদের প্ররােচনায় পরে এই অনুমােদন নাকচ করে দেয়া হয়। 

আগ্রা, আহমদাবাদ, ভারুচ প্রভৃতিস্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন:

 ১৬১৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম জেমস-‘স্যার টমাস রাে' কে জাহাঙ্গীরের দরবারে ইংরেজ দূত হিসাবে প্রেরণ করেন। তিনি ১৬১৮ খ্রিঃ পর্যন্ত রাজদরবারে অবস্থান করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ইংরেজ বণিকগণ বিশেষ কতকগুলি সুযােগ সুবিধা অর্জন করে, যদিও প্রচলিত কোন বাণিজ্য চুক্তি মােঘলদের সাথে সম্পাদিত হয়নি। ১৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে টমাসরাের ভারতবর্ষ ত্যাগের পূর্বে ইংরেজগণ সুরাট, আগ্রা, আহমদাবাদ, ভারুচ প্রভৃতি স্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে পূর্ণোদ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে দেয়। এছাড়াও ইংরেজগণ বাণিজ্যিক সুবিধার্থে নানাস্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। যেমন: ভারতবর্ষের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে, ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে মৌসলিপট্রমে প্রধান কেন্দ্র স্থাপন, আরামটাও নামে অপর একটি কুঠি স্থাপন এগুলাের মাঝে উল্লেখযােগ্য। বাংলার হরিপুর ও বলেশ্বরে ১৬৩৩ খ্রীষ্টাব্দে তাদের কুঠি স্থাপিত হয়। ক্রমান্বয়ে পাটনা, কাশিম বাজার, ঢাকা ও রাজমহলসহ গােটা উপমহাদেশে তারা শক্তিশালী কুঠি স্থাপন করে ফেলে। অবাধ বাণিজ্যের সুযােগ লাভ ও কোম্পানীর আগ্রাসী তৎপরতা ও বণিক বেশী এই শ্বেত ভলুকেরা সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হয়। অবশ্য ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মােঘল সম্রাটদের অভ্যন্তরীণ জটিলতা তাদেরকে এই সুযােগ সৃষ্টি করে দেয়।

 ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানীর প্রভাবশালী ডাইরেক্টর স্যার যশুয়া চাইল্ড সর্বপ্রথম রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ দ্বারা অর্থনৈতিক উন্নতি বিধানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই নীতির অনুসরণে যশুয়া চাইল্ডের ভ্রাতা স্যার জন চাইল্ড বােম্বাই বন্দর অবরােধ করেন এবং মােঘল বন্দরসমূহ হতে নৌবহর আটক করেন। ইংরেজদের এহেন রাষ্ট্রবিরােধী কার্যকলাপে মাদকসম্রাট আওরঙ্গকে ক্রদ্ধ হয়ে তাদের সমুচিত শিক্ষা প্রদানের জন্য বােম্বাই দখলের আদেশ দেন। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে জন চাইল্ড ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং উভয় পক্ষের স্বাক্ষরিত চুক্তি মােতাবেক ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ইংরেজগণ দেড় লক্ষ টাকা এবং অধিকৃত অঞ্চলসমূহ ফেরত দিতে অঙ্গীকার করে। বাংলায় ক্রমবর্ধমান ইংরেজ আধিপত্য বিস্তারে মােঘলগণ শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং ইঙ্গ-মােঘল সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল হতে সংগৃহীত পণ্যের জন্য ইংরেজদের স্থানীয় শুল্কনীতি অনুসারে কর দিতে হত। ১৬৫১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার শাহ সুজা মাত্র তিনি হাজার টাকা বাৎসরিক খাজনার বিনিময়ে ইংরেজদের বাংলায় শুল্ক মুক্ত অবাধ বাণিজ্য করার সুযােগ প্রদান করেন। ১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খান ইংরেজদের বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে স্বয়ং আওরঙ্গজেব পণ্য দ্রব্যের উপর শতকরা দু’টাকা ছাড়াও দেড় টাকা জিযিয়া কর হিসাবে প্রদানের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে সমগ্র সাম্রাজ্যে ইংরেজদের অবাধে বাণিজ্য করার অনুমতি দিয়ে ফরমান জারী করেন।

 ইংরেজদের সামরিক প্রস্তুতি:

 এ দিকে মােঘলদের অধীনস্থ স্থানীয় কর্মচারীগণ লােভের কারণে ইংরেজদের কাছ থেকে অবৈধ কর আদায় করতে শুরু করে। কখনও তাদের পণ্যও বাজেয়াপ্ত করে ফেলা হত। এই অজুহাত দেখিয়ে হুগলীর ইংরেজ কুঠিয়াল সাহেবরা তাদের কুঠি সুরক্ষিত করে অত্যাচারী কর্মচারীদের বাধা প্রদানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ইংরেজগণ বলপূর্বক হুগলী দখল করলে মােঘলদের সাথে সংঘর্ষ হয় এবং শায়েস্তা খান হুগলী দখল করে ক্ষমতালিপ্সু ইংরেজদের শুধুমাত্র শায়েস্তাই করেননি বরং বাংলা হতে বিতাড়িত করেন। বিচক্ষণ ইংরেজ জবচার্নক আওরঙ্গজেবের অনুমতি নিয়ে বর্তমান কলিকাতার শশাভাবাজার এলাকায় যা সুতানটি নামে পরিচিত ছিল- গোত্রীয়দের নিয়ে ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি বসতি স্থাপন করেন। ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাপটেন উইলিয়ম হীমের নেতৃত্বে একটি নৌ বহর চট্টগ্রাম অধিকার করলে মােঘলদের সঙ্গে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়। ফলে জবচার্নক সুতানটি ত্যাগে বাধ্য হয়। 

১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে মােম্বাইয়ের ইংরেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আওরঙ্গজেবের চুক্তি হলে জব চার্নক পুনরায় বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে সুবাদার ইব্রাহিম খান সম্রাটের আদেশক্রমে ইংরেজদের অবাধ বাণিজ্যের অনুমতি দেন। ১৬৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজগণ তাদের বাণিজ্য কুঠিকে জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষার অজুহাতে সেগুলােকে দুর্গে পরিণত করার সুযােগ লাভ করে এবং এর ফলে বাংলায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্য উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তাদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির সুদৃঢ় ভীত তৈরী হয়। ১৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজগণ বাৎসরিক বার শত টাকা খাজনা প্রদানের অঙ্গীকার ভিত্তিতে কলিকাতা (কালীঘাট), সুতানটি, গােবিন্দপুর নামে ৩টি গ্রামের জমিদারী লাভ করেন। পরবর্তীকালে এটিই মহানগরী কলিকাতায় রূপান্তরিত হয়। ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের তদানিন্তন রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নামানুসারে কলিকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে কলিকাতা, মাদ্রাজ ও বােম্বাই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শক্তির অভূত্থানের প্রধান তিনটি কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে একটি বিলের মাধ্যমে ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানী নামে অপর একটি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। পুরাতন ও নতুন কোম্পানীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বেধে গেলে ১৭০৮ খ্রিষ্টাব্দে এ দুটি কোম্পানী যৌথভাবে ‘ইউনাইটেড ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নামে পরিচিত হয় এবং ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ কোম্পানী যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে।

 ফররুখ শিয়রের ফরমান: 

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংরেজ বণিকদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথ সুগম হয়। ১৭১৫ খ্রীঃ কলিকাতা হতে ইংরেজ দূত জন সুরমান মােঘল সম্রাট ফররুখ শিয়রের দরবারে উপস্থিত হয়ে সমগ্র মােঘল সাম্রাজ্যে বাণিজ্যিক সুযােগ-সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করেন। জন সুরমানের সঙ্গে চিকিৎসক হ্যামিলটনও দিল্লীতে আগমন করেন এবং ফররুখ শিয়রের কঠিন অসুখের চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তােলেন। এতে সম্রাট ইংরেজদের উপর প্রীত হয়ে ফরমান জারী করে সকল প্রদেশের সুবাদারকে ইংরেজদেরকে সকল প্রকার বাণিজ্যিক সুযােগ-সুবিধা প্রদানের আদেশ দেন। এ ফরমানের বদৌলতে ইংরেজরা বিনাশুল্কে বাৎসরিক মাত্র ৩০০০ টাকা খাজনা প্রদানের অঙ্গীকারে বাংলায় একচেটিয়া ব্যবসা করার অধিকার লাভ করে এবং কলিকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ইজারা নেয়ার অধিকারও তারা লাভ করে। বাৎসরিক ১০,০০০ টাকার বিনিময়ে বিনা শুল্কে তারা সুরাটে অবাধ বাণিজ্য করতে থাকে। এই ফরমান বলেই কোম্পানী বােম্বাইয়ে মুদ্রা ছেপে সমগ্র মােঘল সাম্রাজ্যে চালু করে। ঐতিহাসিক ওরমে এই ফরমানকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ‘ম্যাগনা কাটা’ অথবা মহাসনদ বলে অভিহিত করে।

অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্রাট আওরঙ্গজেবের পর দিল্লির সরকার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে দেশীয় রাজন্যবর্গ স্ব স্ব অঞ্চলে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যেমন, দক্ষিণাত্যে নিযামুল মুলক, অযোধ্যায় সাদাত খান, বাংলায় নবাব আলীবর্দী খান প্রভৃতি। এদিকে আঞ্চলিক অমুসলিম বিদ্রোহী শক্তিগুলাে আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। যেমন, মারাঠা, জাঠ, শিখ, রাজপুত প্রভৃতি। এসব কারণে উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মারাত্মক বিশৃংখলা দেখা দেয়, ফলে ইংরেজরা সুযােগের সদ্ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা লাভের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।

খ. অপরাপর বণিক সম্প্রদায়ের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা:

 বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইংরেজদেরকে এ দেশে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য অন্যান্য ইউরােপীয় বণিক দলের সাথে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হয়। কিন্তু ফরাসী বণিক শ্রেণী এক্ষেত্রে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে ১৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কর্নাটকের প্রথম ও দ্বিতীয় যুদ্ধে ফরাসীরা পরাজিত হলে এ দেশে ইংরেজ বণিকদের একচ্ছত্র বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।